Total Pageviews

Wednesday, 29 October 2025

সন্দ্বীপের রাজনীতির মাটিতে সততা ও আদর্শের প্রতীক —জননেতা মোস্তফা কামাল পাশা এমপি

সন্দ্বীপের রাজনীতির মাটিতে সততা ও আদর্শের প্রতীক —জননেতা মোস্তফা কামাল পাশা এমপি

লেখকঃ নুর হাসান সন্দ্বীপী, যুগ্ম আহবায়ক—গাছুয়া ইউনিয়ন যুবদল

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় টাকার প্রভাব যেন রাজনীতির মূল মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছোট থেকে বড়— ইউনিয়নের চৌকিদার, কেরানি, মেম্বার বা চেয়ারম্যান— যারাই সুযোগ পাচ্ছে, সবাই যেন অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

অর্থই যেন এখন পদ, মর্যাদা ও ক্ষমতার পরিচায়ক।
কিন্তু এই অর্থকেন্দ্রিক রাজনীতির ভিড়ে এমন একজন মানুষ আছেন, যিনি আজও সততা, নীতি ও আদর্শের প্রতীক হয়ে বেঁচে আছেন—
তিনি চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের তিনবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য জননেতা আলহাজ্ব মোস্তফা কামাল পাশা।
১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন মোস্তফা কামাল পাশা।
পিতা হাজী আব্দুল বাতেন সওদাগর এবং মাতা বিবি সখিনা বেগম।
যৌবনের শুরুতেই ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে পদার্পণ করেন তিনি।

মাত্র ২৬ বছর বয়সে, ১৯৭৩ সালে, তিনি বিপুল ভোটে রহমতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা চারবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং স্থানীয় উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।
১৯৯০ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করে আবারও বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এই জননন্দিত নেতা।

১৯৯৩ সালে ন্যাপ (ভাসানী) থেকে বিএনপিতে যোগ দেন মোস্তফা কামাল পাশা। ১৯৯৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনীতির এই পর্যায়ে এসে তিনি শুধু একজন জনপ্রতিনিধি নন—সন্দ্বীপবাসীর কাছে হয়ে ওঠেন বিশ্বাসের প্রতীক।
এক সময় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রের দাপটে আতঙ্কে ভরা ছিল সন্দ্বীপ। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের সেই অন্ধকার সময়কে আলোয় ফিরিয়ে আনেন মোস্তফা কামাল পাশা।
২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন—

 “আমি যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হই, সন্দ্বীপ থেকে সন্ত্রাস চিরতরে নির্মূল করব।”

জনগণ তাঁর ওপর আস্থা রাখে, এবং ফলাফলও সেই আস্থার প্রতিফলন— তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।
অঙ্গীকার রাখেন; মাত্র এক বছরের মধ্যে সন্দ্বীপ হয়ে ওঠে সন্ত্রাসমুক্ত শান্তির দ্বীপ।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মানুষ রাতে দরজা খোলা রেখে ঘুমিয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করেছে নির্ভয়ে।
এই অর্জনই তাঁকে সন্দ্বীপবাসীর হৃদয়ে “শান্তির প্রতীক” হিসেবে রেখেছে।

যখন বর্তমান রাজনীতিতে পিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পর্যন্ত অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক,
তখন তিনবারের এমপি মোস্তফা কামাল পাশা ভাড়া বাসায় বসবাস করেন—নিজস্ব গাড়ি পর্যন্ত নেই।
ব্যক্তিগত জীবনে নির্লোভ, সাহসী ও সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত এই রাজনীতিক ২০১৪ সালে নিজের চিকিৎসার জন্য বাপের রেখে যাওয়া জমি বিক্রি করেন।
রাজনীতি তাঁর কাছে কখনোই অর্থ উপার্জনের মাধ্যম ছিল না; ছিল মানুষের সেবা ও ন্যায়ের সংগ্রামের পথ।
বিগত কয়েক মাস ধরে কিছু কুচক্রী মহল সামাজিক মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালেও
সন্দ্বীপবাসীর ভালোবাসা তাঁকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
যেখানে অনেক নেতা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন, সেখানে মোস্তফা কামাল পাশা এখনো জনতার হৃদয়ের মণিকোঠায়।
তিনি সন্দ্বীপের রাজনীতিতে এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
আজও যখন তিনি রাস্তায় হাঁটেন—মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভিড় জমায়, মিছিল তৈরি হয়।

রাজনীতি মানেই এখন যেখানে অর্থ, সেখানে মোস্তফা কামাল পাশা যেন এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ।
তিনি প্রমাণ করেছেন—সততা, আদর্শ, ও জনগণের ভালোবাসাই প্রকৃত রাজনীতির ভিত্তি।
সন্দ্বীপের মানুষ আজও বিশ্বাস করে—
একজন মোস্তফা কামাল পাশা মানেই শান্তির প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক, আর সর্বোপরি জনগণের নেতা।

Sunday, 19 October 2025

নুর হাসান সন্দ্বীপী'র কবিতা "প্রবাসীর শেষ ফিরে আসা"

সকাল শিশিরের ছোঁয়া পাওয়া নরম ঘাসের উপর বসে আছে নীরবতা,
চারিদিকে কান্নাভেজা কণ্ঠ—
বাতাসও যেন আজ ভারি হয়ে গেছে ব্যথায়।

মনের গভীরে চাপা কষ্টের ঢেউ,
চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু,
এদিক তাকাও, ঐদিকে কফিনবন্দি লাশ—
চেনা মুখ, তবুও অচেনা এখন।

লাশের সারি দেখে বুকটা ভারি হয়ে আসে,
সেই কয়েকদিন আগেও তারা হাসছিল, বলছিল—
"ভালো থেকো, আবার দেখা হবে..."
কিন্তু এভাবেও চলে যাওয়া যায়,
এভাবেও চলে যেতে হয়—
ফিরে আসে শুধু নিস্তব্ধ কাঠের বাক্সে বন্দি প্রবাসের গল্প।

বিদায় না নিয়ে চলে গেলে কি বিদায় দেওয়া হয়?
তবুও দিতে হয়—
চোখের জলে, দোয়ার কথায়,
মাটির বুকে ঠাঁই দেওয়ার সময় বুক ভেঙে কাঁদতে হয়।

কারণ, প্রবাসীদের লাশ বলে কথা—
তাদের ফেরা হয় নিস্তব্ধতায়,
তাদের গল্প শেষ হয় বিমানবন্দরের নিরব গেটের ওপারে,
যেখানে আলিঙ্গন নেই, শুধু অশ্রু ঝরে নিঃশব্দে।

গাছুয়া ঘাট—এক ইতিহাস, এক স্মৃতি

গাছুয়া ঘাট তথা আমীর মোহাম্মদ ফেরিঘাট শুধুমাত্র একটি যাতায়াতের স্থান নয়, এটি সন্দ্বীপবাসীর জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা এক টুকরো ইতিহাস, এক বিশাল স্মৃতির ভাণ্ডার।
যারা ৯০ দশকের মানুষ, তাদের কাছে এই ঘাটের চিত্র এখনো একদম স্পষ্ট— সেই কাদা মাটির পথ, জোয়ার-ভাটার সময়ের হিসাব, মানুষের ভিড় আর লঞ্চের হুইসেলের শব্দ যেন এখনো কানে বাজে।
২০০০ সালের দিকেও গাছুয়া ঘাট ছিল অনেকের জীবনের প্রথম যাতায়াতের দ্বার। আমার মামা শফিকুল আলম কেরানি (প্রকাশ শফি কেরানি) এই ঘাটের লঞ্চে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে, আর বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায়, আমাদের যাতায়াত হতো প্রায়ই এই ঘাট দিয়েই।

আমার খালার বাড়ি শুকলালহাটে হওয়ায় আমাদের জন্য এটি ছিল একধরনের সুবিধাজনক পথ— কখনো একদিন, কখনো দুই দিন খালার বাড়ি থেকে তারপর শহরের পথে রওনা হতাম।

এই ঘাটের যৌবনকাল অনেকেই দেখেছেন— কত আনন্দ, কত দুঃখ, কত হাসি-কান্নার স্মৃতি লুকিয়ে আছে এই ঘাটের ঢেউয়ে। সময়ের সঙ্গে অনেক ইজারাদার এসেছেন, ঘাটের রূপ বদলেছে, তবুও কিছু সমস্যা ছিলো— কাঁদামাটির মধ্যে হেঁটে লঞ্চ বা স্পিডবোটে উঠতে হতো, আবার কখনো জোয়ার-ভাটার সময় মেনে চলাফেরা করতে হতো।

আমার এখনো মনে আছে— চট্টগ্রামের কোলে লঞ্চের অপেক্ষায় মানুষের ভিড়, কেউ বাগানে বসে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ পরিবার নিয়ে অপেক্ষা করছে… সময় যেন থেমে থাকত। সেই দিনগুলো এখন শুধু স্মৃতি।

আজকের দিনে কুমিরা ও গুপ্তচরার ফেরিঘাটের আধুনিকায়নের ফলে সেই দৃশ্যগুলো অনেকটাই বিরল। এখন মানুষের হাতে সময় কম, পকেটে টাকা বেশি— তাই আর অপেক্ষা নয়। সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া এখন অনেক সহজ। আধুনিক লঞ্চ, স্টিমার, মালবাহী বোট, এমনকি দ্রুত স্পিডবোট— সবই এখন মানুষের নাগালে।
এখন কেউ চাইলে সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে নিজের কাজ সেরে দুপুরে বাড়ি ফিরে ভাত খেতে পারে— একসময় যা ছিল অকল্পনীয়।

কুমিরা ও গুপ্তচরা ঘাটের পাশাপাশি এখন আবার নতুনভাবে চালু হয়েছে গাছুয়া আমীর মোহাম্মদ ফেরিঘাট। যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ রাস্তা-ঘাট ও আশেপাশের জায়গাগুলোর সংস্কার করেছে— এটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

শুরুর দিকে এক বা দুই দিন স্পিডবোটের ভাড়া ছিল ৪০০ টাকা, কিন্তু সাধারণ মানুষের মতামত ও সমালোচনা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ ৩০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে— যা সত্যিই যাত্রীবান্ধব পদক্ষেপ। আমি এই উদ্যোগের জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাই।

কেন আপনি আমীর মোহাম্মদ ফেরিঘাট দিয়ে যাতায়াত করবেন?

যদি আপনার বাড়ি উত্তর সন্দ্বীপের ইউনিয়নগুলোতে হয়— যেমন গাছুয়া, বাউরিয়া, সন্তোষপুর, আমানউল্লাহ বা কালাপানিয়া— তাহলে শীতের মৌসুমে গাছুয়া ঘাট দিয়ে চলাচল করা হবে সবচেয়ে আরামদায়ক ও সময় সাশ্রয়ী।

👉 আপনি সহজেই ঘাটে পৌঁছে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন,
👉 দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হবে না,
👉 আর কোনো সমস্যায় পড়লে সরাসরি ঘাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই সমাধান পেতে পারবেন।

আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্দ্বীপের সকল প্রবাসী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি অনুরোধ জানাই —
অন্তত একবারের জন্য হলেও গাছুয়া আমীর মোহাম্মদ ফেরিঘাট হয়ে বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটে যাতায়াত করুন।
নিজেই দেখবেন, যাত্রাটা কতটা আনন্দদায়ক, কতটা স্মৃতিময়।

আপনাদের প্রতিটি যাত্রা হোক নিরাপদ, সুন্দর ও আনন্দময়।
গাছুয়া ঘাট আবার ফিরে পাক তার সেই পুরনো প্রাণ, পুরনো ঐতিহ্য।